প্রতিফলনের সূত্র বোঝার আগে আমাদের কয়েকটা বিষয়কে সংজ্ঞায়িত করে নেওয়া দরকার। যখন এক মাধ্যম থেকে অন্য মাধ্যমে আলো এসে পড়ে আমরা আপাতত ধরে নিই সেটি হচ্ছে একটা সমতল। বিষয়টি বোঝার জন্য আমরা ধরে নিই যে আলোটা প্রতিফলিত হবে, সেটা একটা আলোক রেখা বা আলোক রশ্মি। যখন একটা আলোক রশ্মি এক মাধ্যম থেকে অন্য মাধ্যমের ওপর একটা বিন্দুতে এসে পড়ে প্রথমেই সেই বিন্দু থেকে একটা সম্ব কল্পনা করে নিতে হবে। যে আলোক রশ্মিটি এসে সেই বিন্দুটিতে পড়েছে এবং যে লম্বটি কল্পনা করেছ সেই দুটি রেখাকে নিয়ে একটি সমতল কল্পনা করে নাও। (চিত্র 8.02)
চিত্র 8.02:প্রথম মাধ্যম থেকে দ্বিতীয় মাধ্যমে আলোর প্রতিফলন
যে রশ্মিটি প্রথম মাধ্যম থেকে দ্বিতীয় মাধ্যমে ঢোকার জন্ম একটা বিষ্ণুতে আপতিত হয়েছে আমরা সেটাকে বলব, আপাতন রশ্মি (XO) । যে রশ্মিটি প্রতিফলিত হয়েছে (OX') সেটা হচ্ছে প্রতিফলিত র (বোঝাই যাচ্ছে যেটা দ্বিতীয় মাধ্যমে ঢুকে যাবে সেটা প্রতিসরিত রশ্মি—এই অধ্যায়ে সেটা নিয়ে আমরা আলোচনা করব না । ) আপতিত রশ্মি লম্বের সাথে যে কোণ করবে, সেটাকে বলব আপাতন কোণ (θi), প্রতিফলিত রশ্মি লম্বের সাথে যে কোণ (θr) করবে, সেটাকে বলব প্রতিফলন কোণ। এখন আমরা প্রতিফলনের সূত্র দুটি বলতে পারি
প্রথম সুত্র: আপাতন রশ্মি এবং লম্ব দিয়ে আমরা যে সমতলটি কল্পনা করে নিয়েছিলাম প্রতিফলিত রশ্মিটি সেই সমতলেই থাকবে।
দ্বিতীয় সূত্র: প্রতিফলন কোণটি হবে আপাতন কোণের সমান ।
প্রতিফলনের দুটি সূত্র বলা হলেই প্রতিফলন নিয়ে সবকিছু বলা হয়ে যায় না, সত্যি কথা বলতে কি প্রতিফলনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টাই বলা হয়নি, কতটুকু প্রতিফলন হবে? প্রতিফলনের জন্য যদি আয়না ব্যবহার করা হয় তাহলে প্রায় পুরোটাই প্রতিফলিত হয়, কিন্তু প্রতিফলন কথাটি তো শুধু আয়নার জন্য তৈরি করা হয়নি—এটা তো যেকোনো দুটো মাধ্যমের মাঝে হতে পারে। কতটুকু প্রতিফলন হবে সেটার জন্য সূত্রটির নাম ফ্রেনেলের (Fresnel) সূত্র। সূত্রটা তোমরা আরেকটু বড় হয়ে শিখবে, এখন এটার মূল বিষয়টা জেনে শুধু রাখো— আপাতন কোণ যত বেশি হবে প্রতিফলনও হবে তত বেশি । তোমরা দেখেছ সাধারণ এক টুকরো কাচে প্রতিফলন হয় কম, মাত্র 4% থেকে 5%, বাকিটা ভেতরে দিয়ে প্রতিসরিত হয়ে যায়। কিন্তু প্রতিফলন কোণ যদি বেশি হয় 80° কিংবা 90° এর কাছাকাছি, তাহলে প্রতিফলিত আলো অনেক বেশি বেড়ে যায়। জানালার কাচের পাশে দাঁড়িয়ে তোমরা এখনই সেটা পরীক্ষা করে দেখতে পারো।
আমাদের চারপাশের জগতের সৌন্দর্যের বড় একটা অংশ আসে বিভিন্ন রং থেকে। কিন্তু রংটি আসে কেমন করে? আমরা যখন সবুজ পাতার মাঝে একটা লাল গোলাপ ফুল দেখি, সেটি কেন লাল কিংবা তার পাতাটি কেন সবুজ? বিষয়টা আরো বিস্ময়কর মনে হতে পারে যখন তোমরা দেখবে সবুজ আলোতে লাল ফুলটাকেই দেখাবে কুচকুচে কালো কিংবা লাল আলোতে সবুজ পাতাকে দেখাবে কুচকুচে কালো।
বিষয়টা আসলে সহজ, সাধারণ আলোতে (অনেক সময় বলে সাদা আলো),আসলে সবগুলো তরঙ্গ দৈর্ঘ্যই থাকে, রং যেহেতু তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের ওপর নির্ভর করে, তাই বলা যেতে পারে সেখানে সব রঙের আলো রয়েছে। যখন সবগুলো রং থাকে তখন সেখানে আলাদাভাবে কোনো রং দেখা যায় না—তখন আলোটাকে আমরা বলি বর্ণহীন কিংবা সাদা আলো। এই আলোটা যখন একটা লাল গোলাপ ফুলে পড়ে তখন গোলাপ ফুলটা লাল রং ছাড়া অন্য সবগুলো রং শোষণ করে নেয়—তাই যে আলোটা প্রতিফলিত হয়ে আমাদের চোখে পড়ে, না এবং গোলাপ ফুলটাকে মনে হয় সাল। ঠিক সে রকম সবুজ পাতাটাতে সব রং এসে পড়ে এবং পাতাটা সবুজ ছাড়া অন্য সব রং শোষণ করে নেয়, তখন যে রংটা প্রতিফলিত হয় সেটাতে সবুজ ছাড়া অন্য কোনো রঙের আলো থাকে না বলে পাতাটাকে দেখায় সবুজ।
যদি সম্পূর্ণ লাল আলোতে এই গোলাপ ফুল এবং পাতাটাকে দেখা হতো তাহলে ফুলটাকে ঠিকই লাল দেখা যেত কারণ এটা লাল রং শোষণ করে না কিন্তু পাতাটাকে তার সঠিক রঙে না দেখিয়ে দেখাবে কালো। কারণ পাতাটা লাল রংকে শোষণ করে ফেলবে এবং কোনো রং প্রতিফলিত করবে না। ঠিক একই কারণে সবুজ আলোতে পাতাটা সবুজ দেখালেও সেই রংটা গোলাপ ফুল পুরোপুরি শোষণ করে নেবে বলে গোলাপ ফুল থেকে প্রতিফলিত হবার মতো কোনো রং থাকবে না বলে সেটাকে দেখাবে কালো ।
Read more